আম গ্রীষ্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। তবে অনেকেই জানেন না, আম কতটুকু খাওয়া উচিত এবং কখন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ছোট – বড় সবাই আম খেতে ভালোবাসে। এর মিষ্টি স্বাদ ও মনমুগ্ধকর গন্ধ মনকে তৃপ্ত করে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে রয়েছে অপার পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
আবার অনেক সময় অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
তাই চলুন জেনে নিই, স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে দিনে কতটুকু আম খাওয়া ভালো, এবং কারা কীভাবে খেলে আমাদের জন্য উপকারী হবে।
আমের পুষ্টিগুণ ও ক্যালরি কতটুকু? জানুন কেন পরিমিত আম খাওয়া উচিত
১০০ গ্রাম পাকা আমে প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ ক্যালরি থাকে। এতে রয়েছে:
- শর্করা: ১৭ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম: ১৫ মিলিগ্রাম
- লৌহ: ১.৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন-এ: ২২০০ মাইক্রোগ্রাম (চোখের জন্য উপকারী)
- পটাশিয়াম: ১০০ মিলিগ্রাম (রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক)
- ম্যাগনেশিয়াম: ১৬০ মিলিগ্রাম
- লাইকোপেন: ১২ মিলিগ্রাম (একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট)
তুলনায় ১০০ গ্রাম সেদ্ধ ভাতে প্রায় ২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই অনেকটা চিন্তাভাবনা করেই বলা যায়
পরিমিত পরিমাণে আম খেলে তা ভাতের বিকল্প হিসেবেও কাজ করতে পারে তাছাড়া পুষ্টিগুণেও বেশি উপকারী হতে পারে।
আম কতটুকু খাওয়া উচিত ও কখন খাওয়া উপকারী সময় অনুযায়ী
অনেকে ভাবেন, আম কতটুকু খাওয়া নিরাপদ? এটা নির্ভর করে আপনার খাবার তালিকা, ওজন, বয়স এবং জীবনধারার ওপর।
সকালে ও নাশতার সময় আম কতটুকু খাওয়া উচিত?: যদি আপনি সকালের নাশতায় ৭০ গ্রাম রুটি, একটি ডিম ও সবজি খেয়ে থাকেন, তবে কার্বোহাইড্রেটের বিকল্প হিসেবে প্রায় ২৫০-৩০০ গ্রাম আম খেতে পারেন (তবে প্রায় ২-৩টি মাঝারি আম)। এছাড়া এই সময়ে রুটি বা অন্য কোনো কার্বোহাইড্রেট বাদ দিতে হবে।
মধ্য-দুপুর ও বিকেলে আম কতটুকু খেতে হবে : দুপুরের খাবার এবং বিকেলের নাশতার মাঝে আম খাওয়া শরীরের জন্য সহনীয় এবং উপকারী। বিকেলের পরে আম না খাওয়াই ভালো। কারণ সন্ধ্যার পর বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
খালি পেটে খাওয়া: অনেকের ধারণা, খালি পেটে আম খেলে গ্যাস্ট্রিক হয়। যদিও বাস্তবে, যাঁদের হজমশক্তি ভালো, তাঁরা খালি পেটে আম খেতে পারেন।
জুস না খেয়ে চিবিয়ে আম খাওয়ার সঠিক উপায় : আমের জুসে আঁশ থাকে না, ফলে এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়তে পারে। অতএব আম চিবিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।
কারা সতর্ক থাকবেন?
পুষ্টিবিদের মতে আম কতটা খাওয়া ঠিক, সেটা বুঝে খাওয়া দরকার বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যগত কারণে:
ডায়াবেটিস রোগী: রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সুতরাং, ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
হৃদরোগী ও উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড রোগী: চিনি ও কার্বোহাইড্রেট বেশি হওয়ায় হৃদরোগীদের জন্য সীমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো।
কিডনি রোগী: আমে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রে সমস্যা করতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তি: আম খেতে চাইলে অন্য শর্করা খাবার কমিয়ে খেতে হবে।
শিশুদের জন্য আম কতটুকু খাওয়া উচিত বয়স ও ওজন অনুযায়ী পরামর্শ: শিশুর বয়স, ওজন ও স্বাস্থ্যের ওপর ভিত্তি করে দৈনিক আম খাওয়ার উপযুক্ত পরিমাণ ঠিক করতে হবে।
উপসংহার:
সঠিক নিয়মে এবং পরিমিত মাত্রায় আম খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আম কতটুকু খাওয়া উচিত এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার শরীর ও খাদ্যাভ্যাসের উপর।
তাই নিজের শরীরের অবস্থা অনুযায়ী পরিমিত আম খাওয়ার নিয়ম ঠিক করুন এবং প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
ডা. সাদিয়া তাসনিম
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট